Mukutmanipur

করোনা-র তাপমাত্রা নেমেছে স্বাভাবিকের চেয়েও তিন ডিগ্রি নীচে; ফিল লাইকটা কমেছে আরও বেশ খানিকটা। মার্ভেলের সিনেমাও আসছে পরের পর। লোকাল ট্রেন আর NASAর রকেটগুলো ছাড়া আর বাকি সবার জীবন অনেকটা হয়ত আগের মতই হয়ে এসেছে। যদিও আগের ট্রিপে আমি সেজেছিলাম Watcher, কিন্তু এখন আমার ঘরে ঢুকতে আর (অবশ্যই, চান করার পর) বাধা নেই লোকজনের। অচ্ছুৎদের কথা অবশ্য আলাদা।

দুই সপ্তাহ বৃষ্টির পর, রোদ উঠে সবে মাটিটা একটু শক্ত হচ্ছিলো। কিন্তু, কালকে মদন’দার “জাগো মা” গানটা বেরোবার পর আর নিজেকে রিলিজ না করে পারলাম না। এদিক ওদিক থেকে মশলা-মোরাম কুড়োতে কুড়োতে ১৬০ কিলোমিটারের অরবিটাল হাইট পৌঁছে শোঁ করে মিলিয়ে গেলাম লাল মাটিতে। মিশন ইঞ্জিনিয়ারদের সাথে তোলা একটা ছবি দিলাম; ঠিক তার আগের মূহূর্তের।

কিন্তু, ডেভেলপিং কান্ট্রিতে যা হয় আরকি! বামুন ঠাকুর সিঁদুর লেপে দিয়ে সেই একবার ক্যামেরা মডিউলটার ফোকাসটাই ঘেঁটে দিয়েছিলেন আদ্যন্ত। এবারেও কি তার অন্যথা হয়? বন্যা আর বৃষ্টির ভয় কাটিয়ে উঠতে লেগে গেলো একটা ঘন্টা! বাজ যাতে হঠাত ছুঁয়ে না চলে যেতে পারে, তাই বাদ দিয়ে দিতে হল প্রদক্ষিণপথের দুই বিন্দু (লালগড় রাজবাড়ি আর রামগড় রাজবাড়ি)।

শেষমেশ চৌরঙ্গী থেকে তেল ভরিয়ে আমরা ৮ জন এগিয়ে চললাম ঝাড়গ্রামের দিকে। শিলদা, বিনপুর ছাড়িয়ে চেনা রাস্তা চলেছে ঝিলিমিলির দিকে।

এসব কাজে এসে ছবি তোলা আমার তেমন ধাতে নেই। কিন্তু, এমাটিতে যারা প্রথম এসে ‘হাতশক্ত’ করে গেছেন, তাদের সম্মান জানাতে ফটো সেশন চললো চুটিয়ে। পাশে আমাদের স্করপিও থেকে তখন পত পত করে উড়ছে ন্যাশনাল ফ্ল্যাগ।

ঠিকমত ট্রেনিং না দিয়েই কিছু সেন্সর বসিয়েছিলাম এদিক ওদিক। পুরোন সেন্সরগুলো লোকেশনে বসাবার কথাটাও মাথায় আসেনি। ফলত, ভুল এস্টিমেটের জন্যে মিস করে গেলাম, তালবেড়িয়া ড্যাম। আমি ভাবলাম, আমাদের সামনে আরও ড্যাম আছে। কিন্তু, এ রাস্তায় আবার ফিরতে হলে সময় হয়ত খানিক বাঁচবে, কিন্তু সোনামণি পাহাড় বা রাজবাড়িগুলো দেখতে পাবার কোন চান্সই আর থাকবে না। তাই, “ফেরার পথে হবে” বলে এগিয়ে চললাম। পরের গন্তব্য সুতান জঙ্গলের ওয়াচ টাওয়ার

ঝিলিমিলি, সুতান – এই সব জায়গাগুলো যে খুব দেখার মত, তা হয়ত নয়। কিন্তু, লোকজনের ভিড় নেই, প্রকৃতির একটা আলতো ছোঁয়া আছে – সব মিলিয়ে আমাদের খুব পছন্দের হল।

সুতান থেকে বেরিয়ে আমরা চললাম সবুজ দ্বীপ-এর দিকে। ঝিলিমিলির শেষ প্রান্তে নাকা চেকিং সেরে আরও এক ঘন্টার পথ। সবুজ দ্বীপে ঢোকার সরু রাস্তাটার সামনে এসে আমরা প্রথম দেখতে পেলাম কাঁসাই নদীকে। বর্ষার তেজে ফুলেফেঁপে চলেছে, ডাউনে।

সরু রাস্তাটার কিছুকিছু জায়গা বসে গিয়ে ঢুকতে দিয়েছে নদীকে। গাড়ী সেই জায়গাগুলো দিয়ে যাবে কিনা, অল্প চেক করে নিয়ে এসে পড়লাম সবুজ দ্বীপে ঢোকার গেটে।

এর মাঝে, দেখি কোথা থেকে একটা কুকুর ভেসে চলেছে সেই তুমুল স্রোতে। তাকে পাড়ে পেড়ে ফেলার জন্যে আমর অনেক হাঁকডাক করলাম। কিন্তু, কোনও সুরাহা করতে পারলাম না।

সবুজ দ্বীপে এসে ঢুকলাম ১০ টাকা মাথাপিছু দিয়ে। কিছু ভাঙ্গাচোরা বেঞ্চ, স্লিপ আর দোলনা নিয়েও এই পার্ক শুধু কাঁসাই-এর ভিউপয়েন্ট বলেই ট্যুরিস্টদের বেশ অবাক করে দেবে বলে আমার ধারণা।

পার্ক থেকে বেরিয়ে এসে সিঁধলাম কাশের বনে। তখন দেখি, কোথা থেকে সেই কুকুরটা নদী থেকে উঠে এসে গা ঝাড়ছে।

কাঁচা-পাকা পথ ধরে ফিরে আসার সময় পেলাম প্রত্যাশিত দুলুনি। এপিসেন্টারে একটু ক্ষয়ক্ষতি হলেও আমরা অল্প দোলাচল মনে নিয়ে গিয়ে পড়লাম, যাত্রার মূল পর্বে।

আমার মনে হয়েছিলো, অম্বিকানগরের রাসমঞ্চ-এ অরবিটাল decay হয়ত একটু কম হতে পারে। কিন্তু ওখানে পৌঁছে বুঝলাম, না, তেমন কিছু নয়।

ফুয়েল শেষ হয়েই আসছিলো। তাই, মুকুটমণিপুর ঢুকেই লাঞ্চের অর্ডার দেওয়া হল। তবে সেটা, একটু এদিক ওদিক দেখে নিয়ে করলে কিছুটা সাশ্রয় করা যেত। যাই হোক, গরম গরম খাবারে পেট ভরিয়ে চললাম গেটপাস বানাতে।

গাড়ী আর লাইসেন্স দেখিয়ে, বিনে পয়সার গেটপাস বানিয়ে আমরা দেখতে গেলাম – বাঁধ আর বাধভাঙ্গা জল।

ড্যামের অন্যদিকে এসে আমরা একটা বোট বুক করলাম ১২০০ টাকা দিয়ে। ‘জঙ্গলমহল’-এ চেপে আমরা টুকটুক করে এগিয়ে চললাম …

বনপুকুরিয়ার দিকে। এখান থেকে ২৪০ টাকা দিয়ে একটা মোটর ভ্যান বুক করে চললাম ডিয়ার পার্ক দেখতে। প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে তিন-চারটে হরিণ। স্থানীয় বাচ্চাদের দেওয়া পাতা হরিণগুলোকে খাইয়ে …

… আমরা ফিরলাম নদীর পাড়ে। নৌকাবিহার শেষ করে যখন …

… ওইপাড়ে মুসাফিরানা ভিউ পয়েন্ট-এ পৌঁছলাম, হালকা মেঘ ধরে আসছে, সাথে সামান্য বৃষ্টি।

ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মাঝে চা-বিস্কুট সেরে যখন বেরবো, খুব আবছা রংধনু ফুটেছে ড্যামের মাঝখানটায়।

এবার আমাদের ফেরার পালা, কিন্তু পথে সবচেয়ে আগে পড়বে সোনামণি পাহাড়। গাড়ী থেকে নেমে মিনিট পনেরো হেঁটে হাজির হলাম, পাহাড়ের সামনে।

ব্যাকড্রপে সূর্যাস্ত রেখে খানিকটা জিরিয়ে নিলাম পাহাড়ের মাথায়। আরেকটু বসে গেলে, অনেকগুলো তর্ক সেরে ফেলা যেত, যেমন – উচ্চতা যার ১০০ মিটার, তাকে পাহাড় বলা উচিত কিনা বা এগুলোও পূর্বঘাটের অংশ কিনা ইত্যাদি।

এরপরের স্পট সিমলাপাল রাজবাড়ি যখন পৌঁছলাম, তখন ঘড়িতে পৌনে ছ’টা। Google Maps বলছে, বন্ধের সময়, ছ’টা। হাতে মিনিট পনেরো পেয়ে গেলাম।

কিন্তু, মন্দিরের সামনে যেতে রাজবাড়ির লোকজন জানালেন, বামুন ঠাকুর …

… আগেই মন্দির তালা দিয়ে গেছেন। এসব শুনে, আমার ক্যামেরা মডিউলটা “জাগো মা” বলে আস্তে আস্তে ডাউনের দিকে এগিয়ে গেল চাঁদের সেই দিকটায়, যেটা এখান থেকে আমরা এখনও দেখতে পাচ্ছিনা।

খসড়া :

গাড়ি – লালমোহন (গাড়ি: Scorpio; যোগাযোগ: ৭৯০৮৯ ৭৫৪৪১; গাড়ীভাড়া: ৫২৫০)

দর্শনীয় স্থান – লালগড় রাজবাড়ি, রামগড় রাজবাড়ি, সিমলাপাল রাজবাড়ি, সবুজ দ্বীপ, রাসমঞ্চ, কংসাবতী ড্যাম, মুসাফিরানা ভিউ পয়েন্ট, নীলগিরি ডিয়ার পার্ক, বনপুকুরিয়া ডিয়ার পার্ক, সোনামণি পাহাড়।

আমাদের না-দেখা দর্শনীয় স্থান – লালগড় রাজবাড়ি, রামগড় রাজবাড়ি।