Turn to Turner
সে অনেক দিন আগেকার কথা (২০০১-০২ সাল হবে)। তখনও ইন্টারনেট এত সহজলভ্য হয়নি। আর, ওয়েবেও এখনকার মত এত সাইট, এত ব্লগ গজিয়ে ওঠেনি। সেই সময়ে অবসর কাটানোর জন্যে তাই, আমরা মোবাইল বা ল্যাপটপ খুলে বসে পড়তাম না কথায় কথায় (থাকলে তো, বসব)। গল্পের/কবিতার বই বা ছবি আঁকাই ছিল আমার সময় কাটাবার উপায়।
ছবি আঁকার জন্য ছোটবেলায় আঁকার বই ছিল। পরের দিকে, আর ওই ছোটদের বই থেকে ছবি আঁকতে ভালো লাগতো না। আঁকার মত বিষয় পাওয়া যেত ক্যামেরায় তোলা ছবি বা খবরের কাগজ/ম্যাগাজিন থেকে। তবে, সেও জুটত মাসে এক-আধটা। তবে, মাধ্যমিকের ধারেকাছে হাতে পেয়েছিলাম একটা সোনার খনি। অনেক আগে দেশ পত্রিকার একটা বিশেষ সংখ্যা বেরিয়েছিল “প্রিয়দর্শিনী” নামে। একটা বন্ধুর কাছে ছিল তারই একটা কপি। সেই বন্ধুরই দৌলতে, মাঝে মাঝে হাতে পেতাম বইটা। পুরো বইটাতেই পাতার পর পাতায় বিখ্যাত সব আর্টিস্টদের আঁকা ছবি। দেখে চোখ ধাঁধিয়ে যাবার জোগাড়! বিকাশ ভট্টাচার্য্য, গণেশ পাইন, অমৃতা শেরগিল, ফিদা হূসেন, যামিনী রায়, নন্দলাল বসু, হেমেন বোস, পরেশ মাইতি – কার আঁকা নেই সেই বইতে! যাই হোক, “প্রিয়দর্শিনী”র গল্প বলব অন্য কোনোদিন। আজকের গল্প অন্য একটা বই নিয়ে।
“প্রিয়দর্শিনী”র মত আরও অনেক বই থাকতে পারে। বাড়ি থেকে একা একা বেরোনো শুরু হবার পর, অনেকগুলো দিন কেটেছে কলেজস্ট্রীটে ওইরকম বইগুলোর খোঁজে। কিছু দারুন ছবির বই পেয়েওছি। সেরকমই একটা পাতলা ম্যাগাজিনে প্রথম চিনেছিলাম জোসেফ টার্নার-কে। ইংরেজ আর্টিস্ট; তাঁর অদ্ভুত কল্পনা, অসামান্য ডিটেলস আর তুমুল রঙের ব্যবহার। পরে, টার্নার সম্পর্কে আরও জেনেছি বা ওঁর অনেক ছবি দেখেছি, যখন ইন্টারনেট এসেছে হাতের মুঠোয়। তবে সেই সময়ে টার্নার বলতে আমি জানতাম তিনটে ছবির কথা। আর, এমন সব ছবিই আমাকে উৎসাহ দিত ছবি আঁকার।
প্রথম ছবিটা হল : “The Fighting Temeraire tugged to her last berth to be broken up”
দ্বিতীয় ছবিটা ছিল : “Snow Storm: Hannibal and his Army Crossing the Alps”
আর, শেষ ছবিটা ছিল : “Calais Pier”, যেটা আজ অবধি আঁকা শেষ করে উঠতে পারিনি।
অনেকদিন আর রংটং করা হয়ে ওঠেনা। সময়ের সাথে সাথে শুকিয়ে গেছে এতদিনের অযত্নে রাখা রং, তুলিরও চুল উঠে গেছে আমার মত। শুধু পুরোন ছবি দেখলে ভাবি, কাজের চাপটা না থাকলে বসবো বা হাতের কাজটা শেষ করে শুরু করবো। যাদের অনুপ্রেরণায় এককালে এসব শুরু করেছিলাম, হয়ত তারা আমার কাজের শহরে থাকলে আবার আঁকা শুরু করাটা সম্ভব হবে। ততদিনে এইসব পুরোন আঁকার গল্প বাসা বাঁধুক আমার মত আরও বাকিদেরও সখে-আবদারে।
Pingback: Tinted by a Transcriber | Upper Berth