Museums of Bhubaneswar

ভুবনেশ্বরে মিউজিয়ামের সংখ্যা নেহাত কম নয়। গরমের ছুটিতে যখন বেশী দূরে ঘুরতে যাবার সুযোগ কমে গেল, আমরা অবকাশ পেলেই ঘুরে নিতাম স্থানীয় এই মিউজিয়ামগুলো – কখনও রাজেশের ড্রাইভিং লাইসেন্স করাতে গিয়ে, কখনও রবিবারের বিকেলের ফাঁকে।

Regional Museum of Natural History গেছিলাম কলেজ থেকেই, সপ্তাহের মাঝেরই কোন একটা দিনে। সকাল সকাল ক্লাস সেরে, আমি আর রাজেশ বেরিয়েছিলাম লাইসেন্সের পরীক্ষা দিতে। মানে, রাজেশের পরীক্ষা ছিল, আর আমি এমনি সঙ্গ দিতে গিয়েছিলাম। রাজেশ পরীক্ষা দিতে গেল; আমার কোন কাজ নেই – তাই এদিক ওদিক ঘুরে দেখে এলাম, সামনেই আছে একটা মিউজিয়াম (Regional Museum of Natural History), আর একটা সিনেমা হল (সিনেমা চলছে, গাঙ্গুবাই কাথিয়াবাড়ি)। রাজেশ নির্ঘাত প্রচুর পড়াশোনা করে এসেছিল। তাই, আধঘণ্টার মধ্যেই পরীক্ষা শেষ করে বেরিয়ে এল। লাঞ্চের সময় তখনও হয়নি, আমরা মিউজিয়াম দেখাই মনস্থ করলাম।

Regional Museum of Natural History তে কোন প্রবেশমূল্য নেই; তবু একেবারেই ভিড় নেই বললেই চলে – দর্শকের চেয়ে বেশী এখানকার কর্মচারীর সংখ্যা।

এখানে দেখানো হয়েছে বিভিন্ন রকম পশুপাখি, তাদের বসবাসের জায়গা থেকে শুরু করে পৃথিবীর ইতিহাসের গল্পও।

ছোটখাটো মিউজিয়াম বলে, আমরা পুরোটা ঘুরে লাঞ্চের আগেই আবার কলেজে ঢুকে গেলাম।

অন্য আরেকটা রবিবার, আমরা জয়দীপকে ডাকলাম আমাদের ঘরে। প্রথমে ভেবেছিলাম, রান্না করে খাওয়াদাওয়া হবে। কিন্তু একটু পরেই কারেন্ট চলে গেল। রান্নার ইচ্ছেটা টিকল না – বরং বাইরে খাওয়াই ভালো ভেবে বেরিয়ে পড়লাম বেড়াতে। গরমের মরশুমে ACর ঠাণ্ডায় ঘোরার আদর্শ জায়গা – মিউজিয়ামে। প্রথম গন্তব্য – State Tribal Museum

এই মিউজিয়ামেও কোন প্রবেশমূল্য নেই; কিন্তু মিউজিয়ামের রক্ষণাবেক্ষণ, উপস্থাপনা আর ব্যবস্থাপনা দেখে স্পষ্টতই সরকারের অনুদান আর সমর্থন অনুমান করা যায়।

মিউজিয়ামের বাইরে আছে ওড়িশার আদিবাসী প্রজাতির জীবন-জীবিকার নমুনা…

…আর ভেতরে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তাদের সংস্কৃতি, পোশাকপরিচ্ছদ, উৎসব থেকে শুরু করে অস্ত্রশস্ত্র, কারিগরীবিদ্যা।

শুধু মাটির মডেলই নয়, প্রয়োজনীয় তথ্য দেবার জন্য আছে ডিসপ্লে – যেখানে ভিডিও প্লে করে যেকেউ দেখে নিতে পারবে ইংরাজী আর স্থানীয় ভাষায়।

একই সাথে, সরকার ব্যবস্থা করছেন যাতে আদিবাসী শিল্পসামগ্রী বিক্রি করে, সেই সম্প্রদায়কে যথার্থ পরিচয় আর সাহায্য পায়।

আর, মিউজিয়ামের বাইরে রয়েছে দুটি দোকান – একটি খাবার দোকান, যেখানে চাইনিজ, ইন্ডিয়ান খাবারদাবারের সাথে পাওয়া যাচ্ছে ওড়িয়া আদিবাসী খাবারও; আর একটি স্যুভেনির শপ।

এখান থেকে বেরিয়ে, একটা অটো ধরে আমরা এরপর চললাম Ekamra Kanan Botanical Garden

এখানেও প্রবেশমূল্য নিল, ২৫টাকা।

গরমে ঘোরার জন্য বোটানিক্যাল গার্ডেন একেবারেই জুতসই নয়। এমনিতেই আমার গাছ বা ফুলফলের ব্যাপারে জানার তেমন আগ্রহ নেই; তার ওপর গরমের চোটে তেমন খুঁটিয়ে কিছু দেখার ইচ্ছেও হলনা।

তারই মধ্যে দীঘির ধারে বসে খানিকটা সময় কাটল;…

…আর বাকিটা বন্ধ অর্কিড হাউসে উঁকিঝুঁকি মেরে।

রোদের চোটে খিদেটাও যেন বেড়ে গেল হুট করে – তাই, গার্ডেন থেকে বেরিয়ে আরেকটা অটো ধরে আমরা গেলাম Pal Heights। ওখানকার রেস্টুরেন্টে বিরিয়ানি খেয়ে বেড়িয়েই চোখে পড়ল Sudarshan Art and Crafts Village। তাই ভাবলাম, বাড়ী যাবার আগে ঘুরেই যাই।

এই ভিলেজটা আসলে একটা কারখানা – যেখানে পাথর দিয়ে তৈরি হচ্ছে ঠাকুর, মানুষ বা পশুপাখির মূর্তি।

এইসব মূর্তি তৈরির সেই বিশাল কর্মযজ্ঞ খানিক দেখেশুনে, …

…আমরা বেরিয়ে এলাম। বাড়ির দিকে চললাম, খাওয়ার পরের ঘুমটা সেরে নিতে।